ঐতিহ্যবাহী ছানার সন্দেশ

আগৈলঝাড়া প্রতিনিধি
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামের নাম উচ্চারিত হলে যে একটি জিনিস সবার আগে মনে পড়ে, তা হলো ছানার সন্দেশ। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে এ অঞ্চলের মানুষ ও বাইরের দর্শনার্থীদের কাছে এই মিষ্টি এক অদ্বিতীয় স্বাদের পরিচয় রেখে আসছে। খাঁটি গরুর দুধের ছানা, তার সঙ্গে বিশেষ কৌশলে তৈরি অনন্য মিশ্রণ—সব মিলিয়ে গৈলার সন্দেশ এখনো এ অঞ্চলের পরিচয়ের প্রধান অঙ্গ। গৈলার আরও ঐতিহ্য হলো ক্ষীরপুরি, দধি ও রসোগোল্লা। বিশেষ করে গৈলার ক্ষীরপুরি, দধি আর ঘির তুলনা নেই—স্বাদ, ঘনত্ব ও বিশুদ্ধতায় এগুলো এ অঞ্চলের অন্যতম সেরা ঐতিহ্য।
এ মিষ্টির প্রচলন শুরু করেন সুদক্ষ কারিগর কার্তিক দাস, যিনি প্রায় ৫০ বছর আগে ছানার সন্দেশ তৈরির কৌশল শিখে নিয়ে নিজেই উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু করেন। পরে তাঁর ছেলেদেরও প্রশিক্ষণ দেন, যার ফলে প্রজন্ম ধরে এই সন্দেশের ঐতিহ্য টিকে আছে। স্থানীয় দুর্গা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক গোসাই দাস জানান, ছানার সন্দেশ প্রস্তুত করতে সাধারণত ছয় থেকে সাত কেজি দুধ জ্বাল দিয়ে এক কেজি ছানা পাওয়া যায়। সেই ছানার সঙ্গে সমপরিমাণ চিনি মিশিয়ে অল্প আঁচে ২০ থেকে ৩০ মিনিট জ্বাল দিতে হয়। এরপর স্বল্প আঁচে কয়েক মিনিট রেখে মিশ্রণ পাকানো হলে কাঠের তক্তায় ঢেলে বিভিন্ন আকৃতি দেওয়া হয়। ঠান্ডা হলে তৈরি হয় সুস্বাদু ছানার সন্দেশ, যা স্বাদে যেমন অনন্য, তেমনি গন্ধেও থাকে খাঁটি দুধের টান।
গৈলার এই মিষ্টি এখন শুধু এলাকার ঐতিহ্য নয়, বরং আগৈলঝাড়া উপজেলায় আগত যেকোনো মানুষের জন্য অপরিহার্য স্বাদস্মৃতি। তবে স্থানীয় মিষ্টি ব্যবসায়ীরা জানান, দুধের দাম বৃদ্ধি, কারিগর সংকট এবং কাঁচামালের ব্যয় বাড়ায় এই ঐতিহ্য রক্ষা করা এখন আগের তুলনায় কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও দীর্ঘদিনের অভ্যাস, গুণগত মান এবং স্বাদের অনন্যতার কারণে স্থানীয়রা এখনো মনের টানে ছানার সন্দেশই বেছে নেন।
স্বাদ, সুনাম এবং ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গৈলা গ্রামের ছানার সন্দেশ কেবল একটি মিষ্টি নয়—এটি আগৈলঝাড়ার সংস্কৃতি ও গর্বের চিহ্ন। আপনি যদি আগৈলঝাড়ায় যান, তবে গৈলার ছানার সন্দেশ, ক্ষীরপুরি, দধি ও রসোগোল্লা না খেলে আপনার সফর অসম্পূর্ণই থেকে যাবে।
Share this content:



Post Comment